Archive for the ‘Uncategorized’ Category

মুক্তচিন্তার নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বিকৃত রুচি: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত মাধ্যম: প্রথম আলো, তারিখ: ১৪ এপ্রিল ২০১৬

মুক্তচিন্তার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বিকৃত রুচি ও নোংরা রুচির পরিচয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘একটা ফ্যাশন দাঁড়িয়ে গেছে, ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেই তারা হয়ে গেল মুক্তচিন্তার। আমি তো এখানে মুক্তচিন্তা দেখি না।’ নিরাপত্তার জন্যই বিকেল পাঁচটার মধ্যে বাইরের অনুষ্ঠান শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন,

‘কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখা কখনো গ্রহণযোগ্য না। আমার ধর্ম আমি পালন করি। আমার ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি নোংরা কথা লেখে, সেটা আমরা কেন বরদাশত করব? এখন একটা ফ্যাশন দাঁড়িয়ে গেছে, ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেই তারা হয়ে গেল মুক্তচিন্তার। আমি তো এখানে মুক্তচিন্তা দেখি না। আমি এখানে দেখি নোংরামি, পর্ন। এত নোংরা নোংরা লেখা কেন লিখবে? যাকে আমি নবী মানি, তাঁর সম্পর্কে নোংরা কথা কেউ যদি লেখে, সেটা কখনো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। ঠিক তেমনি অন্য ধর্মের যাঁরা আছেন, তাঁদের সম্পর্কে কেউ যদি লেখে, এটাও কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। এই সমস্ত নোংরা কথা, পর্নের কথা কেন লিখবে? আমি তো মনে করি, এটা সম্পূর্ণ নোংরা মনের পরিচয়, বিকৃত মনের পরিচয়। এটা কোনো ধর্ম পালন নয়। এটা সম্পূর্ণ তাদের চরিত্রের দোষ এবং তারা বিকৃত মানসিকতায় ভোগে। এ জন্য তারা এ ধরনের লেখে। আশা করি, এই ধরনের লেখা কেউ লিখবেন না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন,

‘আমি একজন মুসলমান হিসেবে প্রতিনিয়ত আমার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি। সেখানে কেউ যদি লেখে, এতে আমার নিজেরও কষ্ট হয়। আর এই লেখার জন্য কোনো অঘটন ঘটলে দোষ সরকারের ওপর আসবে কেন? সবাইকে সংযমতা নিয়ে চলতে হবে। সবাইকে একটা শালীনতা বজায় রেখে চলতে হবে। অসভ্যতা কেউ করবেন না। অসভ্যতা করলে তার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা নেব না।’ তিনি বলেন, ‘আর মানুষ খুন করার মধ্যে কোনো সমাধান নাই। একজন লিখল, আরেকজন খুন করে সেটার প্রতিশোধ নেবে, এটা তো ইসলাম ধর্ম বলেনি। বিচারের দায়িত্ব আল্লাহ তাদের দেননি। একজন লিখল তাকে খুন করে ফেলতে হবে। এ বিচার তো আল্লাহ তাকে দেননি। এ বিচার আল্লাহ করবেন। আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন, তিনি শেষ বিচার করবেন। তো, আল্লাহর ওপর কি তাদের ভরসা নাই? আল্লাহর ওপর যাদের ভরসা নেই, তারাই এসব খুন-খারাবি করে। কারণ তারা আল্লাহ-রাসুল মানে না।’

মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকার সব সময় সচেতন বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,

‘একটা নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টির জন্য আমরা কিছু কিছু অনুশাসন দিই। সে জন্য বলেছি, সন্ধ্যার আগে অর্থাৎ পাঁচটার মধ্যে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। এতে দেখলাম কারও কারও মন্তব্য কেন সেটা বলা হলো? যেহেতু আমাকে নিরাপত্তা দিতে হবে। আজকে শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউরোপের দেশগুলিতে—প্যারিসে বোমা হামলা হলো, বেলজিয়ামে বোমা হামলা হয়েছে। আমেরিকার স্কুলে ঢুকে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমাদের একটা দায়িত্ব আছে দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। এই নিরাপত্তা কতটা দিতে পারব, নিশ্চয় আমদের সরকারের কিছু নির্দেশনা যাবে। সবাইকে সেটা মেনে চলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন,

‘নির্দেশনা দেওয়াতে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। যিনি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, তাঁকে আমি বলতে চাই যদি কোনো অঘটন ঘটে তার দায়িত্ব কে নেবে? তিনি নেবেন? যদি ঘটে তাহলে তাঁকেই নিতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে।’

দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বলেন, সব জাতি-ধর্মের মানুষকে নিয়ে বর্ষবরণের যে উৎসব, তা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে বাংলাদেশে। বছরটা সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে, এটা যেন অব্যাহত থাকে।

সরকারের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীরা ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

============================

 

নোট: ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য নিউজ ও ডকুমেন্টগুলোও এখানে সংযুক্ত হবে

ধর্মতত্ত্ব অনেক বড় জিনিস, অন্তত বিজ্ঞান অপেক্ষা বড়। কিন্তু আজকের দিনে বিজ্ঞানীরা এর সবচেয়ে বড় বিরোধীতাকারী, তাদের বস্ততান্ত্রিক মতে শরীরের অতিরিক্ত আর কিছু নাই। শিক্ষিত বাঙ্গালীও বিজ্ঞান জানুক আর নাই জানুক বিজ্ঞানের প্রতি অসম্ভব ভক্তি। কিন্তু ধর্ম বড় বলে আমরা বিজ্ঞানকে ত্যাগ করতে পারি না, ধর্ম সত্য, বিজ্ঞানও সত্য।

ধার্মিকেরা স্বীকার করে আত্মা বলে শরীরের অতিরিক্ত কিছু আছে যা ধ্বংস হয় না। কিন্তু কিভাবে বুঝব?

‘আমি’ বললে যাকে বুঝায় সেই আত্মা। ‘আমি’ দুঃখিত হই, আমার সুখ হয়। এই আমি কে, শরীর ? কিন্তু শরীরের মৃত্যু হলে তখন আর সুখ-দুঃখের অনুভূতির কথা শোনা যায় না বা লক্ষণ দেখা যায় না। অথবা কেউ অপমান করলে শরীরের কিছু হয় না তারপরেও আমরা দুঃখিত হই। তাহলে দেহ দুঃখভোগ করে না, যে দুঃখ-সুখ ভোগ করে সেই ‘আমি’ বা আত্মা, আমার শরীর আমি নয়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে দুনিয়ার কিছু জিনিস ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জানা যায়, কিছু অংশ অনুমান, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জানা যায় না।

আত্মা নিয়ে এ কথাগুলো সকল ধর্মেই আছে। হিন্দুধর্মে আরও আছে,  ভিন্ন ভিন্ন জীবের আত্মা পরস্পর বিচ্ছিন্ন মনে হলেও আসলে পৃথক নয়, সকলে এক জাগতিক আত্মার অংশ, কেউ বন্ধনমুক্ত হলেই জাগতিক আত্মায় বিলীণ হয়।

বিজ্ঞান বলে আত্মার অস্তিত্বের প্রমাণ নাই। যখন প্রমাণ হয় না তখন অবিনাশী, জীবাত্মা, পরমাত্মা এসবের কোন মানে নাই। প্রত্যক্ষ প্রমানের অভাবে বিজ্ঞান তাই আত্মাকে খুঁজে পায় না। বিজ্ঞান সত্যানুসন্ধানী কিন্তু সাধ্যমত চেষ্টা করেও বিজ্ঞান আত্মাকে পায় না, কারণ বিজ্ঞানের ততদূর যাবার ক্ষমতা নাই। যার দৌড় যতদূর সে ততদূর যেতে পারে। প্রমাণের দড়ি বিজ্ঞানের কোমরে বাঁধা, প্রমাণের অতীত আত্মতত্ত্ব তাই বিজ্ঞানের বাহিরে । শ্রীমদ্ভগবতগীতার টীকাভাষ্যে বন্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন “যেখানে বিজ্ঞান পৌঁছে না, সেখানে বিজ্ঞানের অধিকার নাই, যে উচ্চধামের নিম্ন সোপানে বসিয়া বিজ্ঞান জন্মসার্থক করে, সেখানে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অনুসন্ধান করাই ভ্রম।” সেখান থেকে আরেকটা উদ্ধৃতি

” Our victorious science fails to sound one fathom’s depth on any side since it doesn’t explain the parentage of mind (soul). For mind was in truth before all science, and remains for ever, the seer, judge, interpreter, even father of all its systems, facts and laws.”

“যখন বিজ্ঞান একটি ধুলিকণার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে না, তখন আত্মার অস্তিত্ব প্রমান করবে কিভাবে?”

বিজ্ঞানী বলবেন, প্রমাণের অতিরিক্ত মানুষ কিছু জানতে পারে না, আত্মার অস্তিত্বের যখন কোন প্রমাণ নাই, তখন আত্মা সম্পর্কে মানুষের কোন জ্ঞান নেই, হতে পারে না।

দার্শনিকদের মতে প্রত্যক্ষ এবং প্রত্যক্ষমূলক অনুমান কখনই মানুষের জ্ঞানের সীমা নয়। ইমানুয়েল কান্টের মতে, “বুদ্ধি বা যে শক্তির দ্বারা আমরা প্রত্যক্ষ জ্ঞান পাই, তার চেয়ে উচ্চতর আমাদের এক শক্তি আছে। যা বিচার করে পাওয়া যায় না, সেই শক্তির প্রভাবে আমরা তা জানতে পারি।”

বন্কিমের মতে মানসিক বৃত্তির সঠিক অনুশীলন হলে আত্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় এ জ্ঞান স্বতঃসিদ্ধ হয়, অর্থাৎ আপনা -আপনি হয়। তাঁর সময়কার ইন্টেলেকচুয়াল মাস্তান হাক্সলি, টিন্ডাল এদের সকল মানসিক বৃত্তি মার্ঝিত হয়নি বলে তিনি মনে করতেন।

সমগ্র ধর্মতত্ত্বে বিজ্ঞানের অবস্থান তাহলে কোথায়? গীতায় তিন ধরণের সাধনার কথা বলা আছে, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ এবং ভক্তিযোগ। নির্বাণ বা মুক্তির জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োজন শুধু জ্ঞানযোগে, অর্থাৎ জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত ভৌতিক জগতকে নিজের মধ্যে এবং ঈশ্বরে দেখতে পাওয়া। সর্বমোট তিনটা বিষয় জানতে হবে, ভৌতজগত, নিজেকে এবং পরমেশ্বরকে। দার্শনিক কোঁতের মতে ভৌতিক জ্ঞান পাওয়া যাবে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জোতির্বিদ্যা এবং গণিতে ।

নিজেকে জানা যাবে জীববিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানে।

আর ঈশ্বরকে জানা যাবে হিন্দুশাস্ত্রে, গীতায়,উপনিষদে, দর্শনে,পূরাণে।

জ্ঞানযোগ অনেক কঠিন সকলের পক্ষে সম্ভব নয়, সবার জন্য তাই কর্মযোগ বা ভক্তিযোগ।

তথ্যসূত্র: শ্রীমদ্ভগবতগীতা- বন্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

লিখেছেন: নাজিম উদ্দিন

লিখেছেন: নাজিম উদ্দিন

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে স্তন এবং ওড়না নিয়ে বিতর্কে যে প্রশ্নটা করা দরকার সেটা হলো, কেন ছেলেরা শিশুদের দুধপান করায় না? বাবা-মা দু’জনে সন্তানকে দুধ পান করালে আধুনিক ব্যস্ততার যুগে অনেক সুবিধার হতো। পুরুষের শরীরে স্তনের দুগ্ধ উৎপাদনের সম্ভাবনা এবং সামর্থ্য আছে। সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু বাচ্চাকে দুধ না দেয়ার ক্ষেত্রে সেটা বলা যাবে না। অনেক পুরুষ স্তন্যপায়ী প্রাণি এবং কিছু মানুষেরও হরমোনের প্রভাবে স্তন থেকে দুধ বের হয়। গৃহপালিত পুরুষ ছাগলের মধ্যে স্বতস্ফূর্ত দুধ দেয়ার কথা অনেক দিন ধরেই জানা। এমনকি হরমোন চিকিৎসা ছাড়াও কিছু পুরুষ মানুষের স্তন বড় হওয়া এবং দুধ উৎপাদনের উদাহরণ আছে। অনেক দিনের ক্ষুধার্ত পুরুষ মানুষ হঠাত খাবার খেলেও তাদের বুকে দুধ তৈরি হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধে এবং আমেরিকায় জাপানী যুদ্ধবন্দীদের মাঝে এমন হাজার হাজার ঘটনা দেখা গেছে। এর ব্যাখ্যা হলোঃ দীর্ঘকাল ক্ষুধার্ত থাকলে হরমোনের গ্রন্থিগুলো বন্ধ থাকে সাথে লিভারও বন্ধ থাকে যেটা ঐ হরমোনগুলোকে ধ্বংস করে। খাবার পাবার পর হরমোন গ্রন্থিগুলো লিভারের তুলনায় অনেক দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে আসে ফলে শরীরে হরমোনের পরিমান বেড়ে যায়। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও এর প্রমান আছে,

Job remarked of a well-fed man that “His breasts are full of milk.”

(chapter 21, verse 24)

 

তাই প্রশ্ন হলো, পুরুষের শরীরে দুধ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকার পরেও কেন পুরুষকে দুধ পান করাতে হয় না? এ প্রশ্নের উত্তরের মাঝে আমাদের যৌন বিবর্তনের সবগুলো কারণ লুকায়িতঃ জৈব-বিবর্তনে পুরুষ এবং নারীর প্রতিদ্বন্দ্বীতা, সন্তান পালনে পিতৃত্ব আর মাতৃত্বের দ্বন্দ্ব, বংশবৃদ্ধির কাজে দুটি লিঙ্গের বিনিয়োগের পরিমান, বংশগতির উত্তরাধিকার নিয়ে প্রজাতির অঙ্গীকার, ইত্যাদি। এসব বিষয়ে বোঝাপড়া হয়েই প্রজাতি হিসেবে আজকে আমাদের এ অবস্থান। তারপরেও মাতৃস্তন্য পানের কারণে সন্তান আর মায়ের মাঝে যে বন্ধন তৈরি হয় তাতে অনেক পুরুষ ঈর্ষান্বিত হয়ে থাকে এবং সন্তান প্রতিপালন ও বড় হওয়ার পেছনে তার ক্ষুদ্র ভূমিকার কারণে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে।

 

এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গঃ স্তনের কাজ শুধু সন্তানকে দুধ দেয়া নয়, এমনকি সন্তান না থাকলেও দুধ উৎপাদন হতে পারে, স্তন প্রাপ্তবয়স্কতার চিহ্ন। মেয়েদের স্তনকে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন,

“deceptive specific signal of high milk-producing ability”

এটা প্রতারণামূলক কারণ স্তনের চর্বি থেকে দুধ উৎপাদন হয় না। দুধ উৎপাদন হয় স্তনের গ্রন্থিকলা থেকে। তারপরেও পুরুষের স্তনের প্রতি আসক্তির কারণে দুনিয়ার সর্বত্র মেয়েদের বুকে অতিরিক্ত চর্বি জমাতে দেখা যায়। যার কারণে আধুনিক সমাজে ‘breast enhancement’ এর মত ভুয়া সিগনালের দৌরাত্ম্য। স্তন নিয়ে মানুষের ঘোরের কারণে আমাদের জ্ঞাতি প্রজাতি গরিলা, শিম্পাঞ্জী অনেক বড় শরীরের হলেও তাদের স্তনের আকার মানুষের চেয়ে অনেক ছোট।

 

একটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি। স্ত্রীর স্তনের আকার নিয়ে এক ভদ্রলোকের আক্ষেপের শেষ ছিল না। একদিন ভদ্রলোক লক্ষ্য করলেন তার নিজের স্তন বড় হওয়া শুরু করেছে। পরে জানা গেলে ভদ্রলোকের স্ত্রী তার স্তনে এস্ট্রোজেন হরমোন মাখা শুরু করেছে।স্তন বড় করার প্রতি ভদ্রমহিলার তেমন আগ্রহ ছিল না, তারপরেও স্বামীকে খুশি করতে হরমোন মাখা শুরু করে। অপরদিকে ভদ্রলোকের যেহেতু প্রবল আগ্রহ তাই তার স্তন বড় হতে থাকে। 🙂

তথ্যসূত্রঃ Why Is Sex Fun?: The Evolution of Human Sexuality -Jared Diamond

undefined

 

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশফাক মিশুক মুনীর ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদসহ অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, চিত্রশিল্পী ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলিও এ দুর্ঘটনায় আহত হন।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদকে বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনায় নিহত বাকি তিনজন হলেন, মাইক্রোবাসের চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল।

তারেকের প্রোডাকশন ইউনিটের সহকারী পরিচালক প্রসুন রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পাঁচটি মরদেহ বহনকারী চারটি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার পথে রওনা হয়েছে।

তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিন, চিত্রশিল্পী ঢালী আল-মামুন, তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি এবং তারেক মাসুদের প্রোডাকশন সহকারী সাইদুলকে আহত অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু জানান, সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তারেক মাসুদ ও আশফাক মুনীর মিশুকের লাশ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। রাতে তাদের মরদেহ রাখা হবে স্কয়ার হাসপাতালে হিমাগারে।

দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তারেক মাসুদের সহকারী মনিস রফিক জানান, তারা ভোর ৬টার দিকে লোকেশন দেখতে মানিকগঞ্জে যান। ফেরার পথে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সেখানেই মারা যান তারেক ও মিশুক মুনীর।

যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘটনা তদন্তে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সড়ক বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খানকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে।

মুক্তির গান ও মাটির ময়না চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’ এর ‘লোকেশন’ দেখতে মানিকগঞ্জ যায় দলটি। সেখান থেকে ফেরার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তারেক ও তার ফরাসি বংশোদ্ভূত স্ত্রী ক্যাথরিন অভিওভিশন নামের একটি প্রোডাকশন হাউজ পরিচালনা করেন। এই দম্পতির পরিচালনা ও প্রযোজনায় নির্মিত ‘মাটির ময়না’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে মিশুক মুনীর দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। একুশে টেলিভিশন চালু হওয়ার সময় হেড অব অপারেশন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, চ্যানেল ফোর ও সিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। গত বছর দেশে ফিরে এটিএন নিউজের সিইওর দায়িত্ব নেন।

তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদও একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক। ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি দুজনেই চিত্রশিল্পী হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরে পরিচিত মুখ।

তারেকের মামা জুলু চৌধুরী জানান, তারেক ও ক্যাথরিনের দেড় বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রা খালেদা জিয়া ও যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন এ দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিকভাবে জেনেছি, তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি একটি বাসের পেছনে পেছনে যাচ্ছিল। বাসটিকে ওভারটেক করার সময় বিপরীত দিক থেকে আরেকটি বাস আসলে সংঘর্ষ হয়।”

তিনি বলেন, “এভাবে ওভারটেক করা ঠিক হয়নি। রাস্তা বা সিগনালের কারণেও এ দুর্ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমরা তদন্ত করে দেখছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

********

সড়ক দুর্ঘটনায় বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীরসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদসহ ৩ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার মানিকগঞ্জের চৌগাছায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত অন্য ৩ জন হলেন- মাইক্রোবাস চালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশান সহকারী ওয়াসিম ও মো. জামাল। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ হাই ঢালী ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আহত হয়েছেন।
তারেক মাসুদদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় পৌঁছার পর বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ ৫ জন নিহত হয়। শিবালয় উপজেলার সালদানা গ্রামে শ্যুটিং স্পট দেখে তারা ঢাকায় ফিরছিলেন।
আহতদের প্রথম ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ক্যাথরিন মাসুদ ও আনোয়ারা বেগম আশঙ্কামুক্ত হয়েছে। আব্দুল্লাহ হাই ঢালীকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হলেও পরিবারের সদস্যরা তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান।
এদিকে ঘাতক বাস চালক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা যায়নি। তবে জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পলাতক বাস চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
তারেক মাসুদ একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক। তার মুক্তির গান ও মাটির ময়নাসহ অনেক ছবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে।

ক্যাথরিন মাসুদের জন্য রক্তের প্রয়োজন। রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ (O- negetive)। তিনি এখন স্কয়ার হাসপাতালে আছেন।

ক্যাথরিন মাসুদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তারেক মাসুদের সর্বশেষ চলচিত্র রানওয়ে’তে প্রধান চিত্রগ্রাহকের কাজ করেন মিশুক মুনীর।

আজ দুপুরে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ তার নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’ এর শুটিংস্পট দেখে ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াজুড়িতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিশুক মুনীরসহ পাঁচ জন নিহত এবং ক্যাথরিন মাসুদসহ তিন জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটিতে এটিএন নিউজের স্থানীয় সংবাদদাতা মুনিস রফিকও গাড়িতে ছিলেন। তিনি একটি গণমাধ্যমকে জানান, মানিকগঞ্জে একটি শুটিং স্পট দেখে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ ছাড়াও গাড়ির চালকসহ আরো তিন জন ঘটনাস্থলে মারা যান। এছাড়া ক্যাথরিন মাসুদসহ গুরুতর তিন জনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ। আদম সুরত, মুক্তির গান, মুক্তির কথা,অন্তর্যাত্রা, ইন দ্য নেইম অফ সেফ্‌টি, ভয়েসেস অফ চিলড্রেন, সে, আ কাইন্ড অফ চাইল্ডহুড, রানওয়ে, নারীর কথাসহ বেশ কয়েকটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে মুভি বোদ্ধাদের শ্রদ্ধার আসনে স্থান করে নিয়েছেন। নাইন ইলেভেন পরবর্তী পরিস্থিতিতে মাটির ময়না মুভি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে এর বিষয়ের কারণে। মাটির ময়নার পর নির্মাণ করেছেন অন্তর্যাত্রা, রানওয়ে। কাজ করছিলেন নির্মিতব্য নতুন মুভি ‘কাগজের ফুল’ নিয়ে। ডেস্ক ওয়ার্ক শেষ করার পর এ বছরই শুরু হওয়ার কথা ছিল এর শুটিং। নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’ এর ‘লোকেশন’ দেখতে মানিকগঞ্জ যায় দলটি। সেখান থেকে ফেরার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে মিশুক মুনীর দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। একুশে টেলিভিশন চালু হওয়ার সময় হেড অব অপারেশন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, চ্যানেল ফোর ও সিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। গত বছর দেশে ফিরে এটিএন নিউজের সিইওর দায়িত্ব নেন।

তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদও একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক। ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি দুজনেই চিত্রশিল্পী হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরে পরিচিত মুখ।


তারেক মাসুদ তার বাল্যকালের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছিলেন মাদ্রাসায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের পর তিনি সাধারণ শিক্ষার জগতে প্রবেশ করেন এবং একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন এবং দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন।


তারেক মাসুদ জীবনের প্রথম ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র আদম সুরত নির্মাণ করেন। এই ডকুমেন্টারিটি ছিল প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের উপর। এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয় দীর্ঘ সাত বছর ধরে। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যায় প্রামাণ্য দিনটি নির্মাণে।


তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মুক্তির গান’ দেখেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধের উপর একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের অভিপ্রায়ে এদেশের একদল সাংস্কৃতিক কর্মীর সঙ্গ নেন। ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’ নামের দলের এই সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীদের দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী গান শুনিয়ে উজ্জীবিত করতেন। এই শিল্পীদের সাথে থেকে লেভিন প্রায় ২০ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। যুদ্ধের শেষ দিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি ডকুমেন্টারি তৈরি করতে পারেননি।
দীর্ঘ দুই দশক পর ১৯৯০ সালে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ নিউইয়র্কে লেভিনের কাছ থেকে এই ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তারা আরো বিভিন্ন উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের নানা সংরক্ষিত উপাদান সংগ্রহ করেন, বিশ বছর আগের সেই শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ করেন। লেভিনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফুটেজের সাথে সংগৃহীত অন্যান্য উপাদান যোগ করে মুক্তির গান নির্মিত হয়।


মাটির ময়না ছবিটি ২০০২ সালে মুক্তি পায়। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বেগের পটভূমিতে তারেক মাসুদের মাদ্রাসায় জীবনের অভিজ্ঞতা ফুটে উঠেছে। পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে ঐতিহাসিক ঘটনার উদ্ধৃতি থাকলেও সেগুলো একটি কিশোরের মানবিক অভিজ্ঞতায় প্রকাশিত হয়েছে। মাদ্রাসায় তার শিক্ষক, সহপাঠীদের আচরণ আর পরিবারের সদস্যদের সাথে তার সম্পর্কের ভিতর দিয়ে চলচ্চিত্রটির কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে। ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে পুরষ্কুত হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। বহিষ্কারাদেশ বাতিল হবার পর ২০০৫ সালের ১৬ই এপ্রিল ডিভিডি ভার্সন প্রকাশিত হয়। মাটির ময়না চলচ্চিত্রটি প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে “শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র” বিভাগে একাডেমি পুরস্কার প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বাংলাদেশের মনোনয়ন লাভ করে।
ষাটের দশকের উত্তাল সময়ের প্রেক্ষাপট হতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগের সময়ের একটি পরিবার কিভাবে যুদ্ধ ও ধর্মের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার গল্প নিয়ে তৈরি এ চলচ্চিত্র। পরিচালকের নিজের ছোটবেলার কাহিনীর জীবনের উপর ভিত্তি করে এ ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে। অত্যন্ত ধার্মিক বাবা কাজী সাহেব তাঁর ছোট্ট ছেলে আনুকে পড়াশোনার জন্য মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের পাশাপাশি আনুর মাদ্রাসাতেও চরম ও মধ্যপন্থী মতবাদের বিকাশ ঘটতে থাকে। বিভক্তির এই একই চিত্র দেখা যায় গোঁড়া ধার্মিক কাজী ও তাঁর স্বাধীনচেতা স্ত্রী আয়েশার মধ্যে । ধর্মীয় উদারতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং ইসলামের দুর্বোধ্যতা এ সব কিছু মিলিয়ে মাটির ময়না জাগতিক দ্বন্দ্বের একটি দৃশ্যমান প্রতিকৃতি।


তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরিন মাসুদের অন্তর্যাত্রা সেই আত্মিক সংকটের ভেতর দিয়ে আত্মআবিস্কার ও নিজের কাছে ফেরার ছবি। ছবিটি শুরু হয় লন্ডন প্রবাসী শিরিন ও তার ছেলে সোহেলের আকস্মিকভাবে দেশে ফেরার ঘটনা দিয়ে। প্রাক্তন স্বামীর মৃত্যু সংবাদ শিরিন ও তার পুত্রকে দেশে ফিরিয়ে আনে। পনের বছর পর দেশে ফিরে শিরিন তার স্মৃতির শহরকে খোঁজে। পুরানো বান্ধবী ও অন্যান্য মানুষজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, সম্পর্কের জটিল ও খানিকটা বিব্রতকর পরিবেশে স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সন্তানের সঙ্গে গভীর বোঝাপড়া এসবের মধ্য দিয়ে শিরিনের ভেতরের সঙ্কটগুলো স্পষ্ট হয়। অন্যদিকে, সোহেল– লন্ডনের মিশ্র সংস্কৃতিতে যার বেড়ে ওঠা, মাতৃভূমির কোনো স্মৃতিই যার নেই, দেশে ফিরলে কল্পনার মাতৃভূমিটি জীবন্ত হয়ে ওঠে তার ভেতর। মৃত বাবাকে মনে হয় ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটার চেয়ে বেশি কিছু। স্মৃতিহীন মাতৃভূমি, পিতামহ, মৃত বাবা, নিজের মানুষজন ও তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ভেতর সে নিজেকে খোঁজে। সে বুঝতে পারে, এখানে এমন কিছু রয়ে গেছে যার জন্য বার বার ফিরে আসতে হবে তাকে।


তারেক মাসুদ রানওয়ে ছবিটির কাজ শুরু করেন ২০০৮ সালের অক্টোবরে, আর তা শেষ হয় ২০০৯ সালের এপ্রিলে। ২০০৮-০৯ সালে চিত্রায়িত এই কাহিনীচিত্রটির পটভূমি হিসেবে এসেছে ২০০৫-০৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে সংঘটিত কিছু ঘটনা। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সংলগ্ন একচালা ঘরে রুহুল ও তার পরিবার বসবাস করে। তার মা রহিমা ক্ষুদ্র ঋণ সমিতির মাধ্যমে একটি গাভী কিনে দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। রুহুলের বোন ফাতেমা পোশাক রপ্তানি কারখানায় কাজ করে। এক মাস হলো তার বাবা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির সন্ধানে গিয়ে নিরুদ্দেশ। বেকার, কিছুটা হতাশ অথচ আদর্শবাদী রুহুল চাকরি খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করে এবং উড়োজাহাজের ছায়ায় দিন কাটায়। মাঝেমধ্যে সে মামাকে সাইবার ক্যাফের ব্যবসায় সাহায্য করে এবং ইন্টারনেট শেখার চেষ্টা করে। সেখানে দৃঢ় অথচ শান্ত মেজাজের কম্পিউটার দক্ষ আরিফের সঙ্গে তার ক্রমশ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আরিফ উগ্র ধর্মীয় রাজনীতির মধ্যে জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে রুহুলকে উদ্বুদ্ধ করে। নতুন আদর্শে উজ্জীবিত রুহুল বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অবশেষে জীবনের গভীরতর অভিজ্ঞতা উপলব্ধির দিকে এগিয়ে যায়।

 

সূত্রঃ

bdnews24.com

শীর্ষ নিউজ ডট কম

সামহয়ার ইন ব্লগ