Archive for the ‘সাহিত্য’ Category

রুমানা বৈশাখী

 

খুব অল্প সময়েই গল্প লিখে রুমানা বৈশাখী পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছেন। তার লেখা গল্প পড়লে এক ধরনের ভালোলাগা অনুভূত হয়।

রুমানা বৈশাখী। খুব অল্প বয়স থেকে লেখালেখি শুরু এবং এই অল্প বয়সেই রুমানার লেখক খ্যাতি। এ পর্যন্ত তার ১৪টি বই বের হয়েছে। এর মধ্যে একটি উপন্যাস। বাকিগুলো গল্পের বই। প্রথম গল্প ছাপা হয় সেবা প্রকাশনীর রহস্য পত্রিকায়। দ্বিতীয় গল্প প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে। প্রথম লেখা প্রকাশের পর তার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তখন প্রচুর পড়ছি। নিয়মিত সেবা প্রকাশনীর পাঠক। এসএসসি পরীক্ষা শেষ। অনেক অবসর। ভাবলাম গল্প লিখি। লিখলাম দুটো প্রকাশনীর রহস্য পত্রিকায়। মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা ‘এবং ও অতঃপর’ গল্পটি ছাপানো হলো, আমি তো অবাক। এরপর থেকে নিয়মিত সেবা প্রকাশনীর লেখক। আমি যে হরর গল্প লিখি বা পাঠক যে আমাকে হরর গল্প লেখক হিসেবে জানে এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব সেবা প্রকাশনীর। কারণ এরাই আমাকে ধরে বেঁধে হরর গল্প লিখিয়েছে।’ কীভাবে এই লেখালেখির জগতে এলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় গল্পের বই পড়তাম। এবং নিজে লেখক হওয়ার আগে আমি একজন ভালো পাঠক ছিলাম। এখনো আছি। এমন সময় একদিন আমার এক বান্ধবী আমাকে একটা বই পড়তে দিলেন। বইটার নাম ছিল ‘রাজু ও আগুন আলীর ভূত’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের। বইটা পড়ে আমি তো ভীষণ মুগ্ধ। এরপর খোঁজ নিতে লাগলাম জাফর ইকবালের আর কী কী বই আছে এবং কোথায় পাওয়া যায়। এরপর আমি জাফর ইকবাল স্যারের সব লেখা পড়ে ফেললাম। এবং তখন মনে মনে স্থির করলাম বড় হলে আমি জাফর ইকবাল স্যার হবো। আমি তার মতো লেখক হবো। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। অনেকে অনেক কিছু হবার স্বপ্ন দেখে। যেমন কেউ ডাক্তার হবে কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে। আর আমি ঠিক করলাম আমি জাফর ইকবাল স্যারের মতো লেখক হবো। তাকে আমি দারুণ পছন্দ করি। বলতে পারেন তার লেখার অন্ধ ভক্ত আমি।’ পরিবারের নিকট থেকে কারও অনুপ্রেরণা কি কাজ করেছে লেখক হওয়ার ক্ষেত্রে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমার মা আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। যারা অবশ্য চেয়েছিলেন আমি যেন ডাক্তার হই। আমি ছোটবেলা থেকে সাহিত্যের স্পর্শে বড় হয়েছি। বলতে পারেন লেখালেখিটা জেনেটিক্যাল রক্তে মধ্যেই ছিল। রক্তের মধ্যেই ছিল ব্যাপারটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আত্মীয়তার সূত্রে শহীদুল্লা কায়সার, জহির রায়হান, শাহরিয়ার কবির আমার মায়ের মামা এবং আমার নানা হন।’

কথা প্রসঙ্গে জানালেন জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমানও রুমানার নানা হন। প্রিয় লেখকের কথা জানতে চাইলে তিনি আবারও জাফর ইকবালের কথা বললেন। বাংলা সাহিত্যে রুমানার প্রিয় লেখকদের মধ্যে আছেন তারা শংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আমাদের দেশে সেলিনা হোসেন তার প্রিয় লেখক, হুমায়ূন আহমেদের লেখাও তার ভালো লাগে। সময়ের লেখকদের মধ্যে আসমান ওসমান ও আফসানা কিশোয়ারের লেখা রুমানার ভালো লাগে। ২০০৭ সালে রুমানার প্রথম দুটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়। ‘এবং ও অতঃপর’ গল্পের বইটি বের হয় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে। ‘ঋতানৃত’ বইটি প্রকাশ হয় ‘আজকাল’ প্রকাশনী থেকে। ‘এবং ও অতঃপর’ বই প্রকাশের ব্যাপারে আফসানা কিশোয়ারের প্রতি ঋণ স্বীকার করেন রুমানা। এরপর থেকে এই পর্যন্ত ১৩টি গল্পের বই প্রকাশ হয়েছে। ২০১১ সালের বই মেলাতে প্রকাশিত হয় রুমানার প্রথম উপন্যাস ‘সোয়া দুই ফুট’। ২০১২ সালের বই মেলাতেও দুটি উপন্যাস ও একটি গল্পের বই বের হবে বলে জানালেন তিনি। লেখক হতে হলে রুমানার মতে ভালো একজন পাঠক হতে হয়। স্কুলে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে লেখক তৈরি করা যায় না। উন্নতমানের রুচির পাঠক উন্নতমানের রুচির লেখক হতে পারে বলে জানালেন তিনি। লেখালেখিটা পেশা হিসেবে নিয়েছেন রুমানা। নেশাও বটে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে লেখাটাকে পেশা হিসেবে নেওয়া বেশ কঠিন।’ তবু তিনি লেখাটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

কেন লিখেন এই প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘আমি আসলে সিনেমা বানাতে চাই। কিন্তু এই মুহূর্তে সিনেমা বানানো সম্ভব না। সিনেমা বানানোর প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে লেখালেখি করা। আমি আমার ভাবনাগুলোকে ধরে রাখতে চাই। সবার কাছে প্রকাশ করতে চাই। এ ছাড়া আমি পাঠকের জন্য লিখি। আমি মনে করি, পাঠক আছে বলে আমি আছি। যে যত কথাই বলুন না কেন, সবাই চায় যে পাঠকের মনে স্থান করে নেওয়া।’ ইন্টারনেট বা ইলেকট্রিক মিডিয়ার প্রভাব কি পাঠকের উপরে পড়েছে কি না জানতে চাইলে রুমানা বলেন, ‘এখন ফেইসবুক ও ইন্টারনেটে অনেকের বেশি সময় কাটে এটা সত্য। আমাদের দেশে এমনিতেই পাঠক কম। তবে ইলেকট্রিক মিডিয়ার একটা ভালো দিক আছে। ইলেকট্রিক মিডিয়ার কারণে ব্লগিংটা অনেক বেড়েছে। প্রিন্টেড মিডিয়াতে লেখালেখি করাটা এখনো কঠিন একটা পথ। সে তুলনায় ইলেকট্রিক মিডিয়ার ব্লগিংয়ের মাধ্যমে লেখালেখি করা অনেক সহজ। লেখক হিসেবে একটা জায়গা করে নেওয়া সহজ। ভবিষ্যতে আমরা এখান থেকেও ভালো ভালো লেখক পাবো। ব্লগিংয়ের কারণে সবাই লিখতে পারছে পড়তে পারছে। সবচেয়ে বড় কথা নিজের অনুভূতিগুলো সহজেই প্রকাশ করতে পারছে। প্রিন্টেড বই কি হারিয়ে যাবে—এই প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ‘প্রিন্টেড বই কখনোই হারিয়ে যাবে না। যদিও ইন্টারনেটে অনেক বইয়ের সফ্ট ভার্সন পাওয়া যায়। কিন্তু ছাপানো বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টানোর যে অনুভূতি যে আবেগ যে ভালোলাগা তা ওই ইন্টারনেটের বইয়ে পাওয়া যাবে না।’ বই মেলার প্রসঙ্গে রুমানা বলেন, ‘২০০৭ সালে নিজের বই প্রকাশ হওয়ার পর একুশে বই মেলাতে প্রথম যাওয়া হয়।’ এটা রুমানার পণ ছিলো। এখন নিয়মিত যান। বই মেলার স্মরণীয় ঘটনা উল্লেখে বলেন, ‘মেলার ভিড়ের মধ্যে আমার ‘অপদেবতা’ বইটা জাফর ইকবাল স্যারকে দিয়েছিলাম। এবং পরের দিনেই এসেই স্টলে তিনি আমার খোঁজ করে গেছেন। বলেছেন মেয়েটা কোথায়? মেয়েটার বইটা তো আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এটা আমার জীবনে সবচাইতে আনন্দের ঘটনা। তিনি বইটা পড়েছেন। আবার কষ্ট করে প্রতিক্রিয়া জানাতে এসেছেন এটা আমার বড় পাওয়া।’ ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে রুমানা জানান তিনি নিরন্তর লিখতে চান, বড় বড় উপন্যাস লিখতে চান।

রুমানা বৈশাখীর জন্ম ১৯৮৫ সালে ঢাকায়। স্কুলে পড়ার সময় থেকে গল্প লেখা শুরু। স্কুলের বন্ধু ও শিক্ষকরা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন অনেক। বর্তমানে ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত তিনি গল্প উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি গান লিখেছেন। কলাম লিখেছেন তার লেখা তিনটি নাটকে এর মধ্যে প্রচারিত হয়েছে। রহস্য গল্প ও হরর গল্পের পাশাপাশি মূল ধারার গল্পও লিখেন। অচিরেই তিনি জনপ্রিয় লেখকের ধারায় নিজের জায়গা করে নিবেন বলে আশা করা যায়।

সৌজন্যেঃ

দৈনিক ইত্তেফাক